welcome

Tuesday, March 5, 2013

এ জার্নি বাই লেগুনা

-->

  

ব্যাটিং পিচে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা যতটা যৌক্তিক, ঠিক ততটাই যৌক্তিক কলেজে না গিয়ে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াকিন্তু বৃষ্টি যেমন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তে বাগড়া বাধায়, সেভাবে ঘুমানোর সিদ্ধান্তে বাগড়া বাধাল মাআম্পায়ারের নির্দেশে মাঠ ছাড়ার মতো আমাকেও বিছানা ছেড়ে প্যাভিলিয়নে মানে বাথরুমে যেতে হলোএরপর আর কি! বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে ওঠার যুদ্ধের জন্য পজিশন নিলামঅন্যান্য দিন দ্রুত বাস চলে আসেআজকে লেগুনা দাঁড়ায় এসে, বাসের দেখা নেইলেগুনায় আমি কখনো উঠি না, দম আটকে আসেকিন্তু হেলপার এত আবেগ নিয়ে জিগাতলা জিগাতলা ডাকছে যে না উঠে পারলাম নাপা-দানিতে দাঁড়িয়ে আছি, ডান পাশে দুজন তরুণীসহ ছয়জন বসেছেন; সিট খালি নেইবাঁ পাশে একটা সিট খালি, কিন্তু দুজন মোটা লোক এমনভাবে বসেছেন যে মনে হচ্ছে তাঁরাবিনা যুদ্ধে নাহি দেব সিটনীতিতে বিশ্বাসীআমি বললাম, ‘আঙ্কেল, একটু চেপে বসবেন?’ কোনায় বসা ভদ্রলোক বললেন, ‘কোথায় চাপব?’ গলায় ঝোলানো আইডি কার্ডের ফিতা দেখে বুঝলাম উনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদুজন তরুণীর সামনে আঙ্কেল ডাকায় উনি রাগ করেছেনভেতরে এক পা দিয়ে বসতে যাব আর ড্রাইভার দিল টানসেই টান সামলাতে না পেরে আমি পড়লাম ডানপাশে বসা তরুণীদ্বয়ের গায়ের ওপর! সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আরে! আশ্চর্য তো!বলে চিৎকার করে উঠলেনএতে একটা লাভ হলো, বাঁ পাশে বসা দুই মোটামানব একটু সরে আমাকে জায়গা দিলেনকোনোমতে বসেই আমি দুই তরুণীর উদ্দেশে সরিবললামতাতে ফল হলো উল্টোচশমাচোখের তরুণী সঙ্গে সঙ্গে লেকচার শুরু করলেন, ‘মেয়ে দেখলে হুঁশ থাকে না? দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হয়তরুণীর কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোর পেল অন্য যাত্রীরা!
পোলাপান উচ্ছন্নে যাচ্ছে  
ঠিক! ওই ফেসবুক ওদের মাথা খাচ্ছেটেক্সটবুকে মনোযোগ দিলে কি এই অবস্থা হয়?

ডানপাশের মোটা ছেলেটা হেসে বলল, ‘তোমার তো কলেজে পড়ার বয়স, ম্যাডামদের ওপরে পড়লা ক্যান?’
প্রিটেস্টে ফিজিক্সে তিন পেয়েও আমি লজ্জা পাই নাইকিন্তু সহযাত্রীদের কথায় সত্যিই লজ্জা পেলামআমি কি ইচ্ছা করে পড়েছি? দোষ তো ওই দুই মোটামানবের তাঁরা জায়গা নিয়ে এমন দখলসুলভ আচরণ না করলে এই ঘটনাই ঘটত নাআবার লেকচার দেয়! সবাই মনে হয় লেকচার গাইড পড়ে এসেছে! ব্যাটা ড্রাইভারটাও কেন যে ওই সময় টান দিল! আর আমিও গিয়ে পড়লাম ডান পাশে! এক বড় ভাই বলেছিলেন বামপন্থী রাজনীতিই নাকি মুক্তি আনবেতখন পাত্তা দিইনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কথা সত্যবাঁ পাশে পড়লে এত কথা শুনতে হতো নাআমি পেতাম মুক্তি! ধুর! এ জন্যই লেগুনায় উঠি না!
জাতীয় স্বার্থে মোটা মানুষদের লেগুনা পরিহার করা উচিত! দুই পাশের চাপে আমার অবস্থা হয়েছে বার্গারের ভেতরে থাকা কাবাবের মতোতার ওপর তরুণীদ্বয় মাঝে মাঝেই আমার দিকে রাগী ভঙ্গিতে তাকাচ্ছেনতাঁরা আমার চেয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের বড় হলেও এমন আচরণ করলেন, যেন আমি ভিলেন! তাঁদের গলায়ও কার্ড ঝুলছেফিতায় লেখা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালজিগাতলাতেই বোধ হয় অফিসটাদু-একবার চোখে পড়েছেনিশ্চয়ই তাঁরা ওই অফিসেরকথা তো বলছেন অফিস নিয়েই
মার্কেটিং হেড রায়হান আজকাল খুব বিরক্ত করছেখালি পেছন পেছন ঘুরঘুর করে
হ্যাঁ বলে দাও
ওই মাথামোটা গাধাটাকে? অসম্ভব!
হেলপার বলল, ‘ভাড়া দ্যান’! যে চাপে আছি, নড়তেই পারি না, ভাড়া দেব কীভাবে? ইশারায় বললাম পরেপাশের পর্বত ১০ টাকার নোট দিয়ে বললেন, ‘জাপান নামায় দিস১০ টাকায় মিরপুর টু জাপান! বাহ! জাপান গার্ডেন সিটিকে মানুষ জাপান বানিয়ে ফেলেছে!
লোকটা জাপানে নামতেই লেগুনার গতি গেল বেড়েদুই তরুণীর একজন ব্যাগ থেকে আয়না বের করে দেখলেন মেকআপ ঠিক আছে কি না! সেই সঙ্গে চলছে কথা!
রায়হান লোকটার বানানেও ভুল! চিঠির শুরুতে লিখেছে ডিয়ার’! কোন ডিয়ার জানো? চিড়িয়াখানার!
পাশের ভার্সিটি পড়ুয়া মোটা ছেলেটা হেলপারকে বললেন, ‘শংকর নামব, থাবড় দেহেলপার নির্বিকারছেলেটা আবার বললেন, ‘কিরে, কথা কানে যায় না? থাবড় দে!আমি কল্পনা করলাম, ‘থাবড় দেবলতেই হেলপার ছেলেটার গালে কষে একটা চড় দিলঠাসশব্দে বাস্তবে ফিরলামহেলপার থাপড় দিয়েছেতবে লেগুনার গায়েছেলেটা নামতেই বেশ হালকা হলো লেগুনাএকটু দম নিয়ে চশমা পরা তরুণীকে বললাম
আপনারা কি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে জব করেন?
কেন?
না মানে যে রায়হান সাহেবের কথা বলছিলেন, আমি তাঁর ছোট ভাই
মানে? রিয়েলি?
ফোন করে বলি যে আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
না নাফোন দেওয়ার দরকার কী? দরকার নাই
চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাঁরা কতটা চমকে গেছেহেলপার এসে বলল, ‘ভাড়া দ্যানআমি ভাড়া বের করতেই চশমা পরা আপু বললেন, ‘আশ্চর্য, তুমি ভাড়া দেবে কেন? জিগাতলা নামবে তো? আমি দিচ্ছি
শেষে ভাড়া নয়, দিলাম ধন্যবাদজিগাতলায় নেমে আপু বললেন,
তোমার কলেজ কি এখানেই?
জি
গুড! চলো আমরা কিছু খাই? না করবে না কিন্তু!
এই অফারে না করব? অসম্ভব! পাশের আইসক্রিম শপে ঢুকলাম আমরাএকটা স্কুপ নিলামটনসিলের প্রবলেমবলে আপুরা কিছু খেলেন নাউনারা

ভালোই বিপদে পড়েছেনবললেন,
স্যারকে বলবে না আমাদের কথা
কোন স্যার? ফিজিক্স? না কেমিস্ট্রি?
আরে তোমার ভাইয়ার কথা বলছি
নাহ! বললে ও রাগ করবেআপনাদের এত টাকা খরচ করিয়েছি বলে
কী সুইট! আমরা যাই তাহলেদেরি হয়ে গেছেদেখা হবেটা টা
আমিও কলেজের দিকে দিলাম হাঁটাবুঝলাম, পরনিন্দা করলে ধরা খেতে হয়আবার হাসিও পেল খুবআপুরা কখনো জানবেনও না যে আমার কোনো ভাই নেই! ছিলও না কোনোকালে! রায়হান লোকটাকে আমি চিনিই নাযা-ই হোক, আপুদের লেগুনা ভ্রমণটা ভালো না হলেও আমার জন্য বেশ ভালো হয়েছেকিছু করার নেইএটাই জগতের নিয়ম!

No comments:

Post a Comment